ভূমিকা: ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত সদরঘাট হলো বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং বৃহত্তম নদীবন্দর। এটি কেবল একটি ঘাট নয়, বরং দক্ষিণবঙ্গের মানুষের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের প্রধান সেতু। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের পদচারণায় মুখরিত এই স্থানটি ঢাকার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: মুঘল আমল থেকেই সদরঘাট একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তৎকালীন সময়ে এই পথেই দূর-দূরান্ত থেকে বণিকরা বাণিজ্য করতে আসতেন। ঘাটের পাশেই অবস্থিত আহসান মঞ্জিল সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। সময়ের সাথে সাথে এর পরিধি বেড়েছে এবং এটি আধুনিক বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ততম বন্দরে পরিণত হয়েছে।
দৈনন্দিন চিত্র: সদরঘাটের দৃশ্য অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। এখানে ভোরের আলো ফোটার আগেই লঞ্চের ভোঁ আর মাঝিদের হাঁকডাকে ব্যস্ততা শুরু হয়। বিশাল আকারের বিলাসবহুল সব লঞ্চ সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকে। ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলো ঝুঁকি নিয়ে এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যাত্রী পারাপার করে। কুলি বা মুটেদের মাথায় ভারী বোঝা নিয়ে ছোটাছুটি, ফেরিওয়ালাদের হাকডাক আর যাত্রীদের তাড়াহুড়ো—সব মিলিয়ে এখানে এক মহাযজ্ঞ চলে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: সদরঘাট বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে পণ্য পরিবহন এবং যাত্রী যাতায়াতের জন্য এটি সবচেয়ে সাশ্রয়ী মাধ্যম। চাল, ডাল, ফলমূল থেকে শুরু করে নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এই ঘাট দিয়েই রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা: এত ব্যস্ততা সত্ত্বেও সদরঘাটের কিছু সমস্যা রয়েছে। বুড়িগঙ্গার দূষণ, অপরিকল্পিত ট্রাফিক জ্যাম এবং অতিরিক্ত মানুষের ভিড় এখানকার প্রধান সমস্যা। এছাড়া লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উপসংহার: সদরঘাট ঢাকা শহরের প্রাণস্পন্দন। এর কোলাহল আর ব্যস্ততাই বলে দেয় এ শহর কতটা সজীব। এই বন্দরের আধুনিকায়ন এবং বুড়িগঙ্গা নদীর নাব্যতা ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা গেলে এটি ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হবে।